Header Ads Widget

কোনোভাবেই থামছে না পলিথিনের ব্যবহার









সুপারশপে পলিথিন নিষিদ্ধের পর গত ১ নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের কাঁচাবাজারেও পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। কিন্তু সাত দিন পেরোলেও তা কার্যকর হয়নি। বাজারে এখনো অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ এ পণ্যটি। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর ঝিগাতলা কাঁচাবাজার, পলাশী, নিউমার্কেট, আজিমপুরসহ পাড়ামহল্লা ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে অহরহ ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। মুদিদোকান, সবজি বিক্রেতা, মাছ-মাংসের বাজার, খাবারের হোটেলসহ সব স্থানেই ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। বাজারের কোথাও ক্রেতা-বিক্রেতার হাতে দেখা যায়নি বিকল্প পাটের ব্যাগ কিংবা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ।

ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করলেও বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেননি। ফলে নিরুপায় হয়ে আমরা পলিথিন ব্যবহার করছি। পলিথিন ক্ষতিকর হলে এটা নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু সেটা করতে হবে উৎপাদন পর্যায় থেকে। আগে মানুষ পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করত। পলিথিন ব্যবহার না হলে আমাদেরও অনেক খরচ বেঁচে যায়। বাজারে ঘুরে দেখা যায়, পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য মার্কেটের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার টানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করতে এখনো বাজারে আসেনি।

নিউমার্কেটের বনলতা মার্কেটের ফল বিক্রেতা লতিফ কালবেলাকে বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। প্রতিদিন অন্তত ৫০০ টাকা বেঁচে যেত। সরকারের বিকল্প পথ দেখানো উচিত। ছোটবেলায় দেখেছি পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে। পলিথিন ব্যাগ বন্ধের বিষয়ে বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তেমন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। প্রতিটি দোকানে এখনো আগের মতোই পলিথিনের ব্যবহার চলছে। বাধ্য হয়ে এগুলোই ব্যবহার করতে হচ্ছে।


লালবাগের মুদি দোকানদার শরিফ বলেন, অফিসিয়ালি আমাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। যদি পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হয় তাহলে ছোট টিস্যু ব্যাগ ব্যবহার করব। ভারি জিনিসপত্র বহনের জন্য বস্তা ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু পলিথিন উৎপাদন বন্ধ না করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ হবে না।




আদিব নামে এক ক্রেতা বলেন, পলিথিন ব্যবহার ছাড়া কি করব? দোকানদার আমাদের দিচ্ছে; তাই ব্যবহার করছি। এ দেশে আইন বলে কিছু আছে?


বনলতা মার্কেটের জয়েন্ট সেক্রেটারি শফিউল আলম বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের জন্য সরকার মার্কেটের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার ঝুলিয়ে মানুষকে সচেতন করছে। পলিথিনের পরিবর্তে কাপড় বা পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি; কিন্তু প্যাকেটজাত চিনি, দুধ এগুলো গলে যাবে। অন-টাইম চাইয়ের কাপ, প্লেট ও কোমল পানীয়র বোতল বেশি ক্ষতি করে। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে বোতলের গায়ে লিখতে হবে ‘বোতল ফেরত দিলে ৫ টাকা পুরস্কার’। তাহলে মানুষ বোতলগুলো ফেরত দেবে। চায়ের জন্যও টিস্যু কাপ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহুরের বর্জ্যপদার্থের একটা বিরাট অংশ পলিথিন বা প্লাস্টিক। এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যানসারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে।

২০০২ সালে ১ মার্চ আইন করে বিষাক্ত পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সরকার। দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমেনি; বরং দুই দশকের বেশি সময় ধরে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে দেখা গেছে। এরপর সরকার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। তাতেও কার্যকর কিছু হয়নি।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ৩ হাজার কারখানায় দৈনিক ১ কোটি ৪০ লাখ প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন হয়। যার অধিকাংশ কারখানা রয়েছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়। এ ছাড়া পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার (ইএসডিও) এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু ঢাকায়ই প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হয় এবং এর প্রায় সবই বর্জ্য হিসেবে মাটি ও নদনদীতে মিশে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ মৃত্যুঞ্জয় রায় কালবেলাকে বলেন, আগেরকার দিনে পলিথিন ছিল না; কিন্তু সে সময় আমরা কাপড়ের থলে বা পাটের ব্যাগ নিয়ে বাজার করতাম। এখন দোকানদাররা পলিথিন দিচ্ছে তাতে করেই পণ্য নিয়ে আসছি। এটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমাদের জন্য খুবই ভালো হয় যদি শপিং করব ভেবে কোনো পচনশীল ব্যাগ ব্যবহার করি। আমাদের আচরণ পরিবর্তন না করলে সরকার হাজার আইন তৈরি করেও পলিথিন নিষিদ্ধ করতে পারবে বলে মনে হয় না।

এ পরিবেশবিদ আরও বলেন, পলিথিন মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা না বুঝলে এটা বর্জন করা সম্ভব না। সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করছে সেটা ভালো কাজ; কিন্তু পলিথিন উৎপাদনের জন্য আমরা যে কাঁচামাল আমদানি করতাম, সেগুলো বন্ধ হচ্ছে কি না, দেখতে হবে। যদি ফ্যাক্টরি বন্ধ না হয়, তাহলে বাজারে শুধু অভিযান চলবে, কয়েকদিন বন্ধ থাকবে, পরে আবার আগের মতো হয়ে যাবে। সোর্স বন্ধ না করতে পারলে আইন দিয়ে কোনো কিছু বন্ধ করা সম্ভব নয়।


কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Post a Comment

0 Comments