উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। আজ রাতে বা কাল সকালে এটি ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। এজন্য দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি ঠিক কোথায় আঘাত হানতে পারে, বুধবার রাত পর্যন্ত তা একেবারে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে ‘ডানা’র প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই দেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ভারি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়াও বয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষকে চরম বিপাকে পড়তে হয়। ভোলা ও লক্ষ্মীপুরে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬৫ কিমি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০০ কিমি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪০ কিমি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিমি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। এদিন বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ডানা মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দিকে অবস্থান করছিল।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ওড়িশা সীমানার কাছে কোনো জায়গায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ডানার কেন্দ্রটি। আজ রাতে বা কাল সকালে ঝড়টি ভূভাগে প্রবেশ করতে পারে। সমুদ্রে দীর্ঘ সময় থাকায় ঝড়টি প্রাথমিক পূর্বাভাসের থেকে বেশি শক্তিশালী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি প্রায় ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার ছুঁতে পারে। তেমন হলে আজ দুপুরের পর থেকেই শুরু হবে বাতাসের দাপট। রাত যত বাড়বে তত বাড়বে ঝড়ের তাণ্ডব।
বুধবার আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়টির অতিক্রম করার পথ আরও পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে এর প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি অঞ্চলেও বৃষ্টির আশঙ্কা আছে।
যুগান্তর প্রতিবেদন, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
যশোর : বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে বৃষ্টি ও বাতাসে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। বাতাসে আমন ধানের গাছ হেলে পড়েছে। আর বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজি খেতে জমেছে পানি। এতে সবজি খেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নোয়াখালী : দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বুধবার দুপুর ২টা থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চাকমা এ তথ্য জানিয়েছেন।
কয়রা (খুলনা) : সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় কয়রাবাসীর মধ্যে। তাদের আশঙ্কা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে।
সাতক্ষীরা : জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে সাতক্ষীরায় দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তা চলমান থাকবে। তিনি বলেন, তবে সাতক্ষীরায় কতটা আঘাত হানবে এটি এখনও বলা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৈখালী, গাবুরা, সোরা, লেবুবুনিয়া, নাপিতখালী, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, রমজান নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তিত স্থানীয়রা।
ভোলা ও চরফ্যাশন : দুপুরে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি প্রস্তুতি সভা করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান। সভার পর জেলার ৭ উপজেলায় ৭টি ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। চরফ্যাশনের অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার ৫টি রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিটিএ।
মোংলা (বাগেরহাট) : সুন্দরবন উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আশঙ্কায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা : ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বেলা ১১টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়। এতে সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত রাখা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র এবং পর্যাপ্ত শুকনো খাবার। ঝড়ের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ও ধানখালী গ্রামের মানুষ। এই দুই ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভাঙা অবস্থায় থাকায় ঝড়ে পানির উচ্চতা বাড়লে ১৫টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর-ভোলা ও বরিশাল নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিকালে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের ট্রাফিক সুপারভাইজার শরীফুল ইসলাম ও লক্ষ্মীপুর-ভোলা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (কমার্স) পারভেজ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে জেলায় দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। শরীফুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। এতে দুপুর আড়াইটা থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) : উপজেলার আমন, বোরো ও শীতকালীন সবজিচাষিদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বোরো আবাদের জন্য কৃষকরা বীজতলায় বীজ ফেলেছেন। অতি বৃষ্টি হলে বীজতলা জলাবদ্ধ হয়ে বীজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
0 Comments